Blog

19 Sep 2022

Author: Tamanna Binte Rahman

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাসমূহ ধ্বংসঃ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের দায় কার?

একে একে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে ঢাকার তালিকাভূক্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাসমূহ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঢাকা শহরে  ১৯০৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ৩৯টি স্থাপনা/স্থান এবং পরবর্তীতে ২০০২, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে আরো ৩টি স্থাপনাসহ মোট ৪২টি স্থাপনাকে পুরাকীর্তি নিদর্শন তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারী করে। অন্যদিকে রাজউক ২০০৯ সালে ৯৩টি স্থাপনা এবং ০৪টি এলাকাকে ঐতিহাসিক গুরূত্বপূর্ণ স্থাপনা’ (হেরিটেইজ ভবন) এর তালিকাভূক্ত করলেও  পরবর্তীতে ২০২০ সালে শুধুমাত্র ৭৪টি স্থাপনা/স্থানকে ‘ঐতিহাসিক গুরূত্বপূর্ণ স্থাপনা’ (হেরিটেইজ ভবন) এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। 

১৯৬৮ সালের পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। পাশাপাশি, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা (২০০৮) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি, ২০২০) অনুসারে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/এলাকার সীমানার মধ্যে ও সীমানার বাইরের দিকে ৯ মিটারের মাঝে রাজউকের অনুমতি ব্যতীত যেকোনো ধরনের নির্মাণ, উন্নয়ন ও স্থাপনা অপসারণ/ধ্বংস সাধন নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি হেরিটেজ স্থাপনা ও এর আওতাভূক্ত এলাকার সীমানা থেকে বাইরের ২৫০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় কোন স্থাপনা/ভবন নির্মানের পূর্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনাপত্তিসহ রাজউকের বিশেষ কমিটির ছাড়পত্রের প্রয়োজন রয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় কোন স্থাপনা/ভবনের উচ্চতা, সেটব্যাক, ভূমি আচ্ছাদন নির্ধারনের ক্ষেত্রে উক্ত হেরিটেজ ভবন/স্থাপনার সাথে সামঞ্জস্য রাখবার বিধান রয়েছে। এছাড়াও, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন (২০০৯) এর ৩য় তফসিলের ২৬.৭ অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/এলাকা সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট তালিকা, আইন, বিধিমালা এবং কোড এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ থাকা সত্ত্বেও একে একে ভেঙ্গে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাসমূহ। স্থাপনাসমূহ ধ্বংসের কারণ যাচাইয়ে যেসকল বিষয়গুলো সামনে এসেছে-
  • সংরক্ষণের কার্ক্রম গ্রহণ না করা- ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/এলাকা হিসেবে তালিকাভূক্ত সকল হেরিটেজ স্থাপনাসমুহ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন কার্যক্রম নেই। লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল ও রোজ গার্ডেন সংরক্ষণ করা হলেও কোন স্থাপনাই পূর্ণাঙ্গভাবে সংরক্ষিত হয়নি। কিছুদিন পূর্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন লালকুঠি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেও বাকি ৭০টি স্থাপনার সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, রাজউক বা সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন থেকে। প্রজ্ঞাপনের সাথে সাথেই ব্যক্তিমালিকানা কিংবা অবৈধ দখলে থাকা সকল স্থাপনাসমূহ দখলমুক্ত বা অধিগ্রহণ করার কোনো কার্যক্রম সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। 
  • সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান্সমূহের মাঝে সমন্বয়হীনতা- ঢাকা শহরের হেরিটেজ ভবন/স্থাপনা/নিদর্শন/এলাকা তালিকাভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকারের দুইটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও রাজউক। রাজউকের তালিকায় ৭৪টি স্থাপনা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মাত্র ৪২টি স্থাপনাকে হেরিটেজ হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। অন্যদিকে সংরক্ষণ করবার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন ও রাজউক। অথচ তালিকার কোন স্থাপনা কে, কিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং স্থাপনার মালিকানা কিভাবে নির্ধারিত হবে ও সংরক্ষণ পরবর্তী পরিচালনা কিভাবে নির্ধারিত হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজের মাঝে কোন সমন্বয় পাওয়া যায়নি। অবৈধ দখলদার কর্তৃক ভবন ভেঙ্গে ফেললে কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব গ্রহণ করেনা।
  • সংরক্ষণে গুরুত্ব প্রদান না করা- সরকারের বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাসমূহে হেরিটেজ স্থাপনা/স্থান সংরক্ষণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি। ঐতিহাসিক স্থাপনা/স্থান সংরক্ষনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে বিশেষ করে অবৈধ দখল মুক্তকরণ ও ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে। রাজউক কর্তৃক প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (২০১০-২০১৫) ঐতিহ্যবাহী ইমারত/স্থান হিসেবে চিহ্নিত ঙ্করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রণয়ন করলেও বাস্তবায়নের কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। সদ্য প্রজ্ঞাপন জারিকৃত রাজউক কর্তৃক প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-২০৩৫) তেও এ বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিধা রয়েই গেছে।
  • অপর্যাপ্ত নজরদারীর ব্যবস্থা- স্থাপনাসমুহ সংরক্ষণে পর্যাপ্ত নজরদারী বা মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন প্রতিষ্ঠানই জোরদার ও কঠোর তদারকি ও নজরদারীর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
  • আইন ও বিধিমালার অকার্যকর প্রয়োগ- ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/এলাকার সুনির্দিষ্ট তালিকা, সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধিমালা ও কোড এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ থাকা সত্ত্বেও রূপলাল হাউজ, বড় কাটরা, শঙ্খনিধি হাউজসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ভেঙ্গে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আইন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তালিকাভূক্ত স্থাপনা/স্থানসমূহ সরকারের অধীনে থাকার কথা থাকলেও সরকারী সংস্থাসমূহের নজরদারীর অভাবে স্থাপনা/স্থানসমূহের ব্যক্তি মালিকানা দাবী করা হয়। সেইসকল দাবীদারগণ পরবর্তীতে আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের বিভিন্ন ফাঁকফোকর ও দূর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন উপায়ে দখল করে নেন এবং সুযোগ অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ভেঙ্গে ধ্বংস করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বা বহুতল ভবন তৈরি করে। তিনটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও কোন প্রতিষ্ঠানই স্থাপনা/স্থানসমূহ সংরক্ষণে আইনের সফল প্রয়োগ করেনি।
  • সীমানা/ইমারত সঠিকভাবে চিহ্নিত না করা- তালিকাভূক্ত করা হলেও বেশিরভাগ ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/স্থানের সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। এমনকি তালিকাভূক্ত বেশিরভাগ স্থাপনাকে চিহ্নিত করে কোন প্রদর্শনযোগ্য সাইনবোর্ড রাখা হয়নি। ফলে, স্থাপনা/স্থানটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত বা সংরক্ষিত কিনা সেটা বোঝা যায়না। এর সুযোগে স্থাপনা/স্থানটি বেদখল হয়ে যায়।
  • যথাযথ জ্ঞান, দক্ষতা ও দায়ীত্বশীলতার অভাব- যথাযথ জ্ঞান এবং দায়ীত্বশীলতার অভাবে, অনেকক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ভবন ভাঙ্গার অনুমতি প্রদাণ করেন, অন্যদিকে রাজউকের কর্মকর্তা/কর্মচারী ইমারত নির্মানের অনুমতি প্রদাণ করেন। অপরদিকে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী তালিকাভূক্ত স্থাপনা ভাঙ্গার বিষয়ে খবর রাখেন না, এমনকি দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙ্গার পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই তালিকায় স্থাপনাটি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননা।
  • জবাবদিহিতার অভাব- সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/এলাকা হিসেবে তালিকাভূক্ত হেরিটেজ স্থাপনাসমুহ সংরক্ষণের বিষয়ে কোন জবাবদিহিতা নেই। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমুহে জবাবদিহিতামুলক কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। একইসাথে যেসকল পেশাজীবী (স্থপতি/প্রকৌশলী) ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার স্থানে আইন ও বিধি না মেনে ইমারতের নকশা করেন ও বাস্তবায়ন করেন, আইনের দূর্বলতার কারণে তাদের সবসময় যথাযথ জবাবদিহিতা্র আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়না।
  • জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকা- তালিকাভূক্ত ভবনের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে জনগণের মাঝে কোন সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া হয়না। তাই, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মাঝে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শনের গুরুত্ব ও সংরক্ষণের বিষয়ে কোনোরুপ সচেতনতা কাজ করেনা।
সারাবিশ্বে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শন সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পুরানো ঢাকার স্থাপনাগুলো শুধু রাজধানী নয় বরং পুরো দেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। ঢাকার হাজার বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস, জাতিসত্ত্বা বিকাশের সুদীর্ঘ পথ-পরিক্রমা উদঘাটনে স্থাপতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভবন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে৷ সুনির্দিষ্ট বিধিমালা এবং কমিটি থাকা সত্ত্বেও বড় কাটরা, রূপলাল হাউজ, শঙ্খনিধি হাউজসহ অন্যান্য হেরিটেজ স্থাপনাগুলোকে একে একে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। ঐতিহ্য বিলীন করে উন্নয়নের সমারোহে ঢাকার গৌরবময় ইতিহাসকে ধ্বংস করে ফেলবার যোগাড় হয়েছে। সিংগাপুরের  ৭০০০ স্থাপনাকে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অথচ ঢাকার ৭৪টি স্থাপনাকে সংরক্ষণ করা যাচ্ছেনা। তাই, তালিকাভূক্ত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/স্থান সংরক্ষণে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা জরুরী-
  • দ্রুততম সময়ের মাঝে সরকার কর্তৃক তালিকাভূক্ত ঐতিহাসিক গুরূত্বপূর্ণ স্থাপনা/ভবন/নিদর্শন/এলাকা্র সীমানা নির্ধারণ, চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
  • সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঝে সমন্বয়হীনতা দূর করা। স্থাপনাসমুহ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের হেরিটেজ মনিটরিং কমিটি গঠন করে স্থাপনা/স্থানসমূহ দখলমুক্তকরণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
  • ঐতিহাসিক স্থাপনা/স্থান সংরক্ষণে ভূমি অধিগ্রহণ, মালিকানা নির্ধারণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করা।
  • সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও সঠিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে পূর্বের স্থাপত্যশৈলী পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা।
  • লোকাল পর্যায়ে স্থাপনাসমুহ সংরক্ষণে মনিটরিং সেল স্থাপন ও ডিজিটাল মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মনিটরিং এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঝে দায়িত্ব সমন্বয় করা।
  • সরকারের বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাসমূহে হেরিটেজ স্থাপনা/স্থান সংরক্ষণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া।
  • সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের মাঝেও ঐতিহ্য ও ইতিহাস সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝাতে হবে, তাই এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং প্রচার ও প্রসার করা।
  • সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা ও কোডের কঠোর প্রয়োগ করা। বিশদ ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
  • সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী/পেশাজীবী এবং প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা।
  • দেশের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ও স্থাপত্যশৈলীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ এবং পুননির্মাণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা।
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শন জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতীক। এর থেকে প্রাচীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোনো বিশেষ পর্বের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধ্ররমীয় ইতিহাস স্পষ্ট করতে সে সময়ের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শন যত্নসহকারে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। সারাবিশ্বে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শন সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়াসহ সারাবিশ্বে অতি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং এলাকা। এমনকি সেখানকার স্থাপনা/ভবন/এলাকা/নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। দেশি ও বিদেশি পর্যটকেরা এসব স্থান ভ্রমণ করতে আসেন। ফলে এগুলো বিশ্বের মানুষের কাছে নিজের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সাহায্য করে এবং এ শিল্প থেকে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল বিষয়গুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এবং একইসাথে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।